কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নৌকা-মালিকেরা নির্ধারিত এসব নৌকাভাড়ার তালিকা খুব একটা মানছেন না। নানা কারণ দেখিয়ে তাঁরা ভাড়া হাঁকছেন যার যার ইচ্ছেমতো। কিন্তু যেহেতু নৌকো ছাড়া টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ সম্ভব নয় এবং নৌকো হলে শুধু হাওর নয় বরং হাওরের আশেপাশের সবগুলো পর্যটনকেন্দ্রই আপনি ঘুরে দেখতে পারেন, সেজন্যে আপনার ভ্রমণদলের সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী ছোট বা বড় একটি নৌকো আপনাকে ভাড়া করতেই হবে।
নৌকা ভাড়া নেবার সময় কিছু জিনিস খেয়াল রাখুন—যেমন নৌকায় সোলার প্যানেল দিয়ে মোবাইল ফোন চার্জ করার সুবিধা, বাতি, ফ্যান, বাথরুম আছে কি না এবং থাকলে সেটা কেমন। নৌকা ভাড়া করার সময় অবশ্যই ভালোমতো দরদাম করে নিন। একটি নৌকার ভাড়া কত হবে সেটা নির্ভর করে ৩টি বিষয়ের ওপর, সেগুলো হলো—নৌকার ধারণক্ষমতা, সুযোগ-সুবিধা এবং ভ্রমণের মৌসুম।
ছোট দল হলেই সম্ভবত স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন বেশি। ছোট নৌকার মাঝিরা স্থানীয় বাসিন্দা। হাওরের প্রত্যেকটি জায়গা এবং আশেপাশের গ্রামের লোকজন তাদের পরিচিত। হাওরপাড়ের এসব গ্রামের বাসিন্দারা খুবই সহজ-সরল আর অতিথিপরায়ণ। এদের সঙ্গে আপনি খুব সহজেই ভাব জমিয়ে ফেলতে পারবেন। ফলে তারা আপনার ভ্রমণকে সর্বোচ্চ আনন্দ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। টাঙ্গুয়ার হাওরে ভাড়া করার জন্যে স্থানীয়দের মালিকানাধীন এরকম শতাধিক ছোট ছোট নৌকো রয়েছে।
তবে যেহেতু টাঙ্গুয়া ভ্রমণে নৌকার বিকল্প নেই এবং বলতে গেলে রাত্রিযাপনেরও একমাত্র ঠাঁই নৌকো, সেজন্যে বেশকিছু বাহারি ও বিলাসবহুল নৌযান মেলে তাহিরপুরে। এসব নৌকায় প্রশস্ত ছাদ, পর্যাপ্ত ঘুমানোর জায়গা এবং সমতল ও উঁচু উভয়প্রকার কমোডের শৌচাগার রয়েছে। আপনি ভাড়া করার জন্যে এরকম ২০টিরও বেশি নৌকা থেকে আপনার চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী যে-কোনো একটি বেছে নিতে পারবেন।
নৌকায় সোলার প্যানেল এবং লাইফ জ্যাকেট না থাকলে আপনি তাহিরপুর বাজার থেকে আইপিএস এবং লাইফ জ্যাকেট ভাড়া নিতে পারেন। যদি আপনি রান্নার ব্যবস্থাসহ নৌকা ভাড়া নেন তাহলে মাঝি একজন বাবুর্চিকে সাথে নেবে অথবা সে নিজেই রান্না করে দেবে। আপনি আগেভাগেই নৌকাওয়ালার সাথে এগুলি আলোচনা করে তারপর ভাড়ার পরিমাণ ঠিক করবেন।
আপনার পর্যটক দলের সদস্যসংখ্যা যদি ৪০ জনের কাছাকাছি হয়, তাহলে আপনি ভাড়া করতে পারেন ইস্পাতের তৈরি সবচেয়ে বড় ও সর্বাধিক বিলাসবহুল একটি নৌকা। ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু অনলাইন ট্র্যাভেল গ্রুপের পরিচালনায় এমন ছয়টি বড় নৌযান তাহিরপুর উপজেলা সদরের নৌঘাট থেকে পর্যটকদের নিয়ে হাওরে ঘুরতে যায়। নিচে টাঙ্গুয়ার হাওরের কয়েকটি প্রসিদ্ধ নৌকার সুযোগ-সুবিধা ও মোবাইল নম্বর দেয়া হলো।