সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আছে টাঙ্গুয়ার হাওর। এই হাওর বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখি ও দেশীয় মাছের সর্ববৃহৎ অভয়ারণ্য।
টাঙ্গুয়ার হাওর দখল করে রেখেছে ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার দশটি মৌজা। ১২০টি ছোট-বড় বিল রয়েছে এ হাওরে। এ দুই উপজেলার হাওরবর্তী ৪৬টি গ্রামসহ টাঙ্গুয়ার হাওরের মোট আয়তন প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার, তন্মধ্যে ২,৮০,২৩৬ হেক্টর জায়গা জুড়ে আছে জলাভূমি।
টাঙ্গুয়ার হাওর ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৫০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণীর অভয়াশ্রম। প্রতিবছর শীতে দুনিয়ার বিভিন্ন শৈত্যপীড়িত দেশ থেকে অন্তত ২০০ প্রজাতির পাখি উড়ে এসে ঠাঁই নেয় টাঙ্গুয়ার হাওরে।
টাঙ্গুয়ার হাওরে ১৪০টিরও বেশি প্রজাতির মিঠেপানির মাছ পাওয়া গেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো রুই, কালি বাউশ, কাতল, বোয়াল, গাঙ মাগুর, বাইম, তারা বাইম, গুলশা, গুতুম, টেংরা, তিৎনা, গজার, গরিয়া, বেতি, কাইক্যা ইত্যাদি। টাঙ্গুয়ার হাওরের রুই আর কালি বাউশ মাছের স্বাদ অতুলনীয়।
টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ভারতের মেঘালয় পর্বতমালা পরিষ্কার দেখা যায়। মেঘালয় থেকে প্রায় ৩০টি ছোট-বড় ঝর্ণা নেমে এসে মিশে গিয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরে। হাওরে দর্শনার্থীদের জন্যে একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। এ হাওরের পানি এত স্বচ্ছ যে, পানির ভেতর দিয়ে হাওরের একেবারে তলা পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যায়। চারদিক অথৈ পানিতে ঘেরা টাঙ্গুয়ার হাওরের গ্রামগুলি দেখতে ভাসমান দ্বীপের মতো লাগে।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ইকোলোজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) বা পরিবেশ-জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল বলে ঘোষণা করে। ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে আন্তর্জাতিক রামসার সাইটের তালিকাভুক্ত করা হয়।