ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনের সময়সূচি ও টিকেটের মূল্য
ঢাকা থেকে কলকাতায় আপনি এখন ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন। ৫২ বছর পরে দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করা হয়েছে। এই রুটে চলাচলকারী ট্রেনের নাম মৈত্রী এক্সপ্রেস। এখানে আমরা ঢাকা-কলকাতা ট্রেনের সময়সূচি ও টিকেটের মূল্য সম্পর্কে আলোচনা করব।
ট্রেন ভ্রমণের জন্যে আগে কিছু তথ্য দরকার হয়। আপনি যদি ঢাকা থেকে ট্রেনে কলকাতায় যেতে চান তাহলে আপনার রওনা হবার আগেই এ রুটের ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসের সময়সূচি, টিকেটের দাম এবং ভ্রমণের অন্যান্য আনুষঙ্গিক নিয়ম-কানুন জেনে নেয়া প্রয়োজন। এই নিবন্ধে সেই সবকিছুই তুলে ধরা হয়েছে।
বিষয়সূচি
ঢাকা টু কলকাতা ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসের সময়সূচি
আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস সপ্তাহে ৪ দিন ঢাকা থেকে কলকাতায় যায়: বুধ, শুক্র, শনি ও রোববারে। ট্রেনটি কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন ছেড়ে যায় সকাল সোয়া ৮টায় এবং কলকাতার চিতপুর স্টেশনে পৌঁছায় বিকেল ৪টায়। একইভাবে, মৈত্রী এক্সপ্রেস সপ্তাহে ৪দিন কলকাতা থেকে ঢাকায় আসে: সোম, মঙ্গল, শুক্র ও শনিবারে। ট্রেনটি কলকাতার চিতপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ০৭টা ১০ মিনিটে রওনা হয় এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে পৌঁছায় বিকেল ৪টা ০৫ মিনিটে।
আরও দেখুন: ঢাকা টু সিলেট ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়া
ঢাকা টু কলকাতা ট্রেন টিকেটের মূল্য
এসি কেবিন: ঢাকা-কলকাতা ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসের এসি কেবিনের প্রত্যেকটি টিকেটের দাম হলো ২,৯৩৫ টাকা। এর সঙ্গে আরও ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স যোগ হবে। কাজেই ট্রেনের ভাড়া হিসেবে আপনার মোট ব্যয় হবে ৩,৪৩৫ টাকা।
এসি চেয়ার: ঢাকা-কলকাতা আন্তঃদেশীয় ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসের প্রতিটি এসি চেয়ারের টিকেটের মূল্য পড়বে ১,৯৫৫ টাকা, এর সঙ্গে ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে ভাড়া ২,৪৫৫ টাকা।
অন্যদিকে, ফিরতি রুটে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসার প্রতিটি এসি কেবিন টিকেটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২,০১৫ রুপি এবং প্রতিটি এসি চেয়ারের ভাড়া ১,৩৪৫ রুপি।
আপনার সঙ্গে থাকা শিশুর বয়স যদি ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে হয়, তাহলে টিকেটের দামে ৫০% ছাড় প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে শিশুর বয়স তার পাসপোর্ট অনুযায়ী হিসেব করা হবে। একেকটি সিঙ্গেল কেবিনে ৩টি এবং ডাবল কেবিনে ৬টি আসন রয়েছে।
ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনের টিকেট বুকিং
দুটি জায়গায় ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনের টিকেট কিনতে পাওয়া যায়: কমলাপুর রেলস্টেশন এবং চট্টগ্রাম রেলস্টেশন। এই দুটি স্থান ছাড়া অন্য কোথাও ঢাকা-কলকাতা ট্রেনের টিকেট বিক্রি হয় না। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টিকেট বুকিংয়ের কার্যক্রম চলে। ভ্রমণের নির্দিষ্ট তারিখের সর্বোচ্চ ২৯ দিন আগে অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করা যায়।
টিকেট কেনার জন্যে আপনাকে আপনাকে কাউন্টারে গিয়ে নিজের পাসপোর্টের মূল কপি (ফটোকপি নয়) দেখিয়ে একটি ফরম সংগ্রহ করতে হবে। ফরমে আপনাকে একটি ক্রমিক নম্বর লিখে দেওয়া হবে। ফরমটি পূরণ করে অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণের মধ্যে ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী আপনাকে আপনার ঢাকা-কলকাতা ট্রেনের টিকেটে গ্রহণ করার জন্যে ডাকা হবে। আপনার কাছে ভিসা না থাকলেও কাউন্টার আপনাকে টিকেট দেবে। তবে রিটার্ন টিকেটের ক্ষেত্রে ভিসা দেখাতে হবে।
কলকাতা টু ঢাকা ট্রেনের টিকেট বুকিং
কমলাপুর রেলস্টেশনে আপনি কলকাতা টু ঢাকা ট্রেনের টিকেটও কিনতে পারেন। কলকাতা-ঢাকা ট্রেনের ২০% টিকেট ঢাকা থেকে বুকিং দেওয়া হয়। বাকি ৮০% টিকেট দেওয়া হয় কলকাতা কাউন্টার থেকে। ভারতে, কলকাতা-ঢাকা ট্রেনের টিকেট কিনতে হবে ডালহৌসির ফেয়ারলি প্লেস রেলওয়ে বিল্ডিং বা চিতপুরস্থ কলকাতা টার্মিনাল স্টেশন থেকে। এই দুই জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও কলকাতা-ঢাকা ট্রেনের টিকেট বিক্রি হয় না। ফেয়ারলি প্লেসে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টিকেট বুকিং দেওয়া হয়। অন্যদিকে, কলকাতা স্টেশনের দোতলায় টিকেট বুকিং চলমান থাকে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট ফেরত দেবার নিয়ম
ঢাকা থেকে কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কেনার পর যদি কোনও কারণে আপনার যাত্রা বাতিল করতে হয়, তাহলে আপনি কাউন্টারে গিয়ে আপনার কেনা টিকেটটি ফেরত দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে সার্ভিস চার্জ কর্তন করে টিকেট বাবৎ প্রদত্ত বাকি টাকা আপনাকে ফেরত দেওয়া হবে। ট্রেন ছাড়ার সময়ের ১২০ ঘণ্টা আগে ফেরত দিলে সার্ভিস চার্জ হবে ২৫ টাকা, ১২০ ঘণ্টার কম এবং ৯৬ ঘণ্টার বেশি হলে সার্ভিস চার্জ হিসেবে কেটে রাখা হবে ৫০% টাকা, এবং ৯৬ ঘণ্টার কম ও ৭২ ঘণ্টার বেশি হলে ক্রয়কৃত টিকেটের মূল্যের ৭৫% টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে কর্তনযোগ্য। এর চেয়ে কম সময় আগে টিকেট ফেরত দেওয়া যায় না।
আরও দেখুন: Bangladesh Railway Online Ticket Booking
ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া
ঢাকা থেকে কলকাতার উদ্দেশে ট্রেন ভ্রমণের শুরুতে, আপনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে পৌঁছুবেন এবং একটি ইমিগ্রেশন ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণ করবেন। আপনার ট্রেন কলকাতা স্টেশনে পৌঁছানোর আগে ট্রেনেই আপনাকে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনের পক্ষ থেকে অবতরণের অনুমতি সম্বলিত ডিসএম্বারকেশন কার্ড দেওয়া হবে। আপনি যথাযথ তথ্য দিয়ে সেই কার্ডের খালি ঘরগুলো পূরণ করবেন। ঠিকানা এবং ফোন নম্বরের জায়গায় আপনার সম্ভাব্য হোটেলের ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দিন। আর কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে অতিথি হতে চাইলে কার্ডে আপনার আত্মীয়ের পুরো নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দিন।
ট্রেনটি আপনার গন্তব্য স্টেশনে থামার পরপরই ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ান। সেখানে ভারতীয় শুল্ক কর্তৃপক্ষ আপনাকে একটি ডিক্লেয়ারেশন ফরম দেবে। ফরমটি পূরণ করুন। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়ে গেলে আপনার লাগেজগুলি তুলে নিয়ে একটি স্ক্যানিং মেশিনে পরীক্ষা করা হবে। কাস্টম থেকে বের হবার আগে আপনার পূরণ করা ডিক্লেয়ারেশন ফরমটি জমা দিন। চাকুরিজীবীদের জন্যে তাদের এনওসি সাথে রাখা দরকার।
কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরার দিন ভোর ৫টা নাগাদ আপনি কলকাতার চিতপুর রেলস্টেশনে পৌঁছুবেন। কলকাতা স্টেশনে আপনার প্রথম কাজ হলো ডিক্লেয়ারেশন ফরম বা ঘোষণাপত্রটি সঠিকভাবে পূরণ করে ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ানো। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে পৌঁছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের মধ্যে এমবারকেশন কার্ড বিতরণ করবে। এখানে শুল্ক বিভাগের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে কেবিন যাত্রী এবং চেয়ার কোচ যাত্রীদের জন্যে দুটি আলাদা লাইন থাকবে।
আরও দেখুন: ঢাকা থেকে রাজশাহী ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়া
ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনে মালামাল বহন
একজন প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রী দুটি লাগেজে ৩৫ কেজি পর্যন্ত মালামাল বিনামূল্যে সঙ্গে নিতে পারেন। আপনার সঙ্গে যদি কোনও শিশু থাকে, তাহলে আপনি বিনামূল্যে ২০ কেজি পর্যন্ত মাল নিতে পারবেন। ৩৫ কেজির বেশি ওজনের মালামালের ক্ষেত্রে, ৩৫ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত প্রতি কেজিতে ২ ডলার করে চার্জ প্রযোজ্য হবে। আর যদি আপনার মালপত্র ৫০ কেজির বেশি হয়, তাহলে আপনাকে বাড়তি প্রতি কেজির জন্যে ১০ ডলার করে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।
ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনে খাবারের ব্যবস্থা
ঢাকা এবং কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে একটি খাবার বহনকারী গাড়ি যায়। এতে ট্রেনযাত্রীদের জন্যে হালকা খাবার এবং পানীয় থাকে। যাত্রীদেরকে নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে খাবার সরবরাহ করা হয়। খাবারের গাড়িতে কী কী খাবার রয়েছে তার একটি মেনু এবং মূল্য তালিকা টাঙানো থাকে।
সতর্কতা
ঢাকা থেকে কলকাতা বা কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশে চলা ট্রেনটি যদি কোনও কারণে অনির্ধারিত কোনো স্থানে থামে, তখন ট্রেন থেকে নামা বা ট্রেনে ওঠা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেউ এমনকিছু করার চেষ্টা করলে রেলওয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
Vai emagreson a taka lagbo plz bolen
খরচের বিস্তারিত তথ্য আমাদের নিবন্ধে দেয়া আছে। আপনি বরং আরেকবার দেখুন। ধন্যবাদ।