পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার এবং কুয়াকাটার পরে, বাংলাদেশের তৃতীয় পর্যটকপ্রিয় সৈকত—যদিও তা ওই দু’টোর মতো অত বড় নয়। তবে এটা শহরের কাছেই, আর যাতায়াতও সহজ। তাই আপনি কম সময়ে এবং কম খরচেই এই সৈকত থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে, কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হলো সূর্যাস্তের দৃশ্য।
ছকবাঁধা দিনযাপনে একঘেয়ে লাগছে? পতেঙ্গা বীচে বেড়াতে গিয়ে সাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশিতে অস্তায়মান সূর্যের বিগলিত লালিমার প্রতিফলন দেখে আর বিধৌত বিশুদ্ধ বাতাসে বুক ভরে প্রশ্বাস টেনে মুহূর্তেই আপনার সকল ক্লান্তি উবে গিয়ে মন সতেজ হয়ে উঠবে। বিশেষত রাতে, কর্ণফুলী নদী আর বঙ্গোপসাগরের মিলনমোহনায় ফুটে ওঠে এক অন্যরকম সৌন্দর্য। তাই মধ্যরাত পর্যন্ত পর্যটকেরা ঘুরে বেড়ান নেভাল একাডেমি সংলগ্ন এই বিচে।
সেজন্যেই সৈকতে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় সূর্যাস্তের সময়।
বিষয়সূচি
পতেঙ্গা-যাপনের তরিকা
বিশেষত শীতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকেরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে দলবেঁধে আনন্দ করতে আসেন। এখানে টাটকা শুঁটকি ও সামুদ্রিক হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিস কেনা যায়। পতেঙ্গা সৈকতের সৌন্দর্য বাড়াতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, রাতে উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, দর্শনার্থীদের বসার জন্য সারি সারি সিমেন্টের পিঁড়ি বানানো হয়েছে এবং একটি পুলিশ চৌকি স্থাপন করা হয়েছে।
পতেঙ্গার সমুদ্র সৈকতের কিনার জুড়ে সারি সারি পিঁড়ি।
পতেঙ্গা সৈকতে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্যই সবচেয়ে সুন্দর। এই সৈকতে একটা রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেল যাপন করা যে-কারো জন্যেই একটি অসাধারণ ব্যাপার। আপনি একটি স্পীড বোট ভাড়া করে সমুদ্রে ঘুরে বেড়াতে পারেন। বালিয়াড়ি জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্যে রয়েছে সী বাইক। আর মাত্র কুড়ি টাকাতেই পতেঙ্গা সৈকতে আপনি কিছুক্ষণের জন্যে হয়ে যেতে পারেন একজন ঘোড়সওয়ার। কেনাকাটার জন্যে পতেঙ্গায় আছে বার্মিজ মার্কেট। খাওয়া-দাওয়ার জন্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রকমারি স্ট্রিট ফুডের দোকান।
পতেঙ্গা বিচের কাছেই রয়েছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাঁটি, বন্দরের জেটি এবং প্রজাপতি পার্ক। এই সবগুলো জায়গা পরস্পরের কাছাকাছি, তাই আপনি এক যাত্রাতেই ঘুরে দেখতে পারবেন সবগুলো। বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দর সময় কাটানোর জন্যে চট্টগ্রামের এই পতেঙ্গা সৈকত আসলেই ভারি সুন্দর জায়গা।
পতেঙ্গার এ দৃষ্টিনন্দন বিদ্যুতায়ন সৈকতের সৌন্দর্য এবং ভ্রমণকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে।
কীভাবে যাবেন পতেঙ্গা সৈকতে
ঢাকা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যেতে হলে আগে আপনাকে চট্টগ্রামে পৌঁছুতে হবে। কমলাপুর টার্মিনাল থেকে বিআরটিসি বাসে এবং সায়দাবাদ বাস স্টেশন থেকে সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক সার্ভিস প্রভৃতি বাসে চড়ে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন চট্টগ্রাম। গ্রিনলাইন, সোহাগ, সৌদিয়া, হানিফ ইত্যাদি পরিবহনের এসি বাস চট্টগ্রামে যায়—ভাড়া ৮৫০-১১০০ টাকা। নন-এসি বাসের মধ্যে রয়েছে এস. আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের বাস—ভাড়া পড়বে ৪০০-৫০০ টাকা।
ঢাকা থেকে আপনি যদি ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে চান, তাহলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী/গোধূলি অথবা চট্রগ্রাম মেইলে চড়ে রওনা হতে পারেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়া ট্রেনগুলোর বিস্তারিত সময়সূচি ও ভাড়ার পরিমাণ দেখে নিন: Dhaka to Chittagong Train Schedule and Ticket Price.
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ বিমান তো আছেই। তাই আরও কম সময়ে যেতে চাইলে ধরতে পারেন বাংলাদেশ বিমান (০২-৯৫৬০১৫১-১০), জিএমজি এয়ারলাইন্স (০২-৮৯২২২৪৮), ইউনাইটেড এয়ার (০২-৮৯৫৭৬৪০) অথবা রিজেন্ট এয়ার (০২-৮৯৫৩০০৩)-এর একটি উড়োজাহাজ।
দর্শনার্থীরা স্পিড বোট নিয়ে মেতেছেন নৌবিহারে।
সিলেট থেকেও সড়কপথে এবং রেলপথে চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। সড়কপথে গ্রিনলাইন পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাস যায় চট্টগ্রামে। চাইলে আপনি ট্রেনেও যেতে পারেন সিলেট থেকে চট্টগ্রাম। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৩টি ট্রেন চলে চট্টগ্রাম অবধি। আন্তঃনগর ট্রেন পাহাড়িকা এক্সপ্রেস শনিবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল সোয়া ১০টায়, উদয়ন এক্সপ্রেস রোববার বাদে সপ্তাহের সবদিন রাত ৯টা ৪০-এ, এবং সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০:১০-এ মেইল ট্রেন জালালাবাদ এক্সপ্রেস চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া ১৯০ টাকা থেকে ১২৮৮ টাকা পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে পতেঙ্গা সৈকত দক্ষিণ দিকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। চট্টগ্রাম শহর থেকে আপনি নিজের গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা বা লোকাল বাসে করে পতেঙ্গা যেতে পারেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে পতেঙ্গা যেতে সময় লাগবে ঘণ্টাখানেক। সিএনজি অটোরিকশায় গেলে ভাড়া নেবে ২৫০-২৮০ টাকা। বাসে চট্টগ্রাম থেকে পতেঙ্গা যেতে চাইলে আপনি চট্টগ্রাম শহরের নিউমার্কেট, রেলস্টেশন রোড, বহদ্দারহাট, লালখান বাজার মোড়, জিইসি মোড় কিংবা চক বাজার মোড়ে পাবেন সৈকতগামী বাস। বেশিভাগ বাসের গায়েই ‘সী বিচ’ কথাটা লেখা আছে, তাই দেখলেই চিনে যাবেন।
মাঝরাতে, যখন পর্যটকেরা পতেঙ্গাকে একা ফেলে রেখে ফিরে গেছেন যার যার হোটেলে।
পতেঙ্গা হোটেল ও রিসোর্টস
পতেঙ্গা সৈকতের কাছেই রয়েছে চমৎকার আবাসন বাটারফ্লাই পার্ক রেস্ট হাউস। ভাড়া নেবে ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা। ফোন: ০১১৯৫০১০৫০০, ০১১৯৫০১০৬০১। তবে চট্টগ্রাম শহরের কোনো হোটেলে উঠে সেখান থেকেও সহজেই পতেঙ্গা ঘুরে যাওয়া যায়। চট্টগ্রামে নানা মানের হোটেল পাবেন। নিচে কয়েকটি হোটেলের তথ্য দেয়া হলো। এগুলোর সবই মানসম্পন্ন অথচ কম বাজেটের হোটেল।