সন্দ্বীপ সন্দর্শন
To read it in English, click here.
সন্দ্বীপ বাংলাদেশের চমৎকার একটি দ্বীপ, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের কাছে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যের কারণে সন্দ্বীপ একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। কিন্তু শুধুই প্রকৃতি নয়, সন্দ্বীপ একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদও বটে। তিন হাজার বছর ধরে নদীর স্রোত আর সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে সন্দ্বীপ। সাগর-নদী-বেষ্টিত এ দ্বীপ চট্টগ্রাম জেলার আস্ত একটি উপজেলা। ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫-১৫ কিলোমিটার প্রস্থের এ দ্বীপে প্রায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস।

বিরাট নদী আর বিশাল সাগরের হাতছানি, বিস্তীর্ণ সবুজ ফসলের মাঠ, শতাব্দীপ্রাচীন স্থাপনা, নদীর বুকে জেগে ওঠা চর, পাখ-পাখালির কলকাকলি এবং স্থানীয় মানুষদের অকৃত্রিম জীবনধারা—সন্দ্বীপের এমন সবকিছুই দেখার মতো। শীতকালে ক্যাম্পিংয়ের জন্যে সন্দ্বীপ একটি দারুণ জায়গা। এখানে ঘুরতে গিয়ে অভিভূত না হবার একদম সুযোগই নাই।

সন্দ্বীপ কীভাবে যাবেন
সবচেয়ে কম খরচে সন্দ্বীপ যাওয়ার বাহন হলো লঞ্চ। ঢাকার সদরঘাট থেকে একটি লঞ্চ সপ্তাহে তিন দিন যায় সন্দ্বীপে। সকাল ৯টায় রওনা হয় এ লঞ্চ। অবশ্য নদীতে পানি কম থাকলে সন্দ্বীপের উদ্দেশে নৌযাত্রাটি বিরক্তিকর হতে পারে। কেননা তখন মেঘনায় ওঁৎ পেতে থাকে ডুবোচর।
কাজেই কম সময়ে যাবার উপায় হলো বাস। ঢাকার ফকিরাপুল কিংবা দেশের অন্য যে-কোনো এলাকা থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে চড়ে চলে যান সীতাকুণ্ডের কুমিরা স্টিমার ঘাটে। ভাড়া হবে দূরত্ব অনুপাতে। ঢাকা থেকে নন-এসি বাসে গেলে ভাড়া পড়বে ৫০০ টাকার মতো। খেয়াল রাখবেন যেন আপনাকে কুমিরায় নামিয়ে দেয়।

কুমিরা থেকে অটোরিক্সায় ১০-২০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন কুমিরা-গুপ্তছড়া ফেরিঘাটে। যেখানে এপারে কুমিরা, ওপারে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া। ফেরিঘাট থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার ভাড়া স্পীডবোটে ৩০০ টাকা, ট্রলারে ১৫০ টাকা। এক্ষেত্রে স্পীডবোট নেয়াই সবচেয়ে ভালো। সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে নেমে মূল শহর পর্যন্ত অটোরিকশায় যেতে ভাড়া হতে পারে ১৫০-২০০ টাকা।
অন্য উপায় হলো ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে সোজা চট্টগ্রাম। এখানে দেখে নিন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচি ও টিকেট মূল্য। তারপর চট্টগ্রাম সদরঘাট থেকে এমভি বারো আউলিয়া বা এমভি মতিন নামক জাহাজে চড়ে সরাসরি পৌঁছে যাবেন সন্দ্বীপ। জাহাজ দু’টো পালাক্রমে শনি, সোম, বুধ ও বৃহস্পতিবারে চট্টগ্রাম সদরঘাট থেকে সন্দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয় প্রতিদিন সকাল ৯টায়।
কুমিরা স্টেশনে দু'টি আন্তনগর ট্রেন থামে
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলায় প্রায় ৭ লাখ মানুষের বসবাস। এদেরকে ট্রেনে চলাচল করতে হলে আগে পৌঁছাতে হয় ৩৮ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে। তাই স্থানীয় জনগণ “ট্রেন থামাও” নামে গণস্বাক্ষর অভিযান চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
এই দীর্ঘ গণদাবির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এখন থেকে কুমিরা রেলস্টেশনে ঢাকাগামী দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন দু’ মিনিটের জন্যে দাঁড়াবে। এর ফলে সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপের মানুষের জন্যে কুমিরা রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
সীতাকুণ্ডের স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি সন্দ্বীপের স্থানীয় যাত্রী ও পর্যটক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিল্পকারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকদের যাতায়াতও সহজ হলো এই ট্রেন বিরতির মাধ্যমে।
যে-দু’টি ট্রেন কুমিরা স্টেশনে দাঁড়াবে, সেগুলো হলো চট্টলা এক্সপ্রেস ও মহানগর এক্সপ্রেস।
চট্টলা এক্সপ্রেস: বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান কার্যালয় থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ০৮:৫৮-তে কুমিরা স্টেশনে পৌঁছাবে। ২ মিনিট স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার পর ট্রেনটি সকাল ৯টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। অতঃপর এটি বিকেল ০৩:৫০-এ ঢাকায় পৌঁছাবে। কুমিরা স্টেশনে চট্টলা এক্সপ্রেসের শুধু ‘সুলভ’ আসনের টিকিট কাটা যাবে, যার দাম হবে ১৭৫ টাকা।
মহানগর এক্সপ্রেস: দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে আসবে মহানগর এক্সপ্রেস। ট্রেনটি কুমিরা স্টেশনে পৌঁছাবে দুপুর ১২:৫৬-তে। ২ মিনিট অপেক্ষার পর ১২:৫৮-তে এটি কুমিরা স্টেশন ছেড়ে যাবে। তারপর সন্ধ্যে ০৭:১০-এ ঢাকায় পৌঁছাবে মহানগর এক্সপ্রেস। কুমিরা স্টেশনে ৩৪৫ টাকায় এই ট্রেনের ‘শোভন চেয়ার’-এর টিকিট কেনা যাবে।
অবশ্য ‘ট্রেন থামাও’ আন্দোলনকারীদের দাবি হলো, শুধু ঢাকামুখী দু’টি ট্রেন এখানে থামালে হবে না। সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপের ৭ লাখ মানুষের সুবিধের কথা চিন্তা করে সব আন্তঃনগর ট্রেনকে এখানে থামানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
সন্দ্বীপে থাকার ব্যবস্থা
সন্দ্বীপে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার জন্যে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিযাপন করতে পারেন। সেজন্যে সন্দ্বীপ শহর থেকে চলে যান দ্বীপের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে মেঘনার পাড়ে। গ্রামের নাম রহমতপুর। তাঁবু খাটানোর জন্যে ওটাই সবচেয়ে ভালো জায়গা। সেখানে সুবিধামতো জায়গা দেখে আস্তানা বানিয়ে নিন। চন্দ্রালোকিত বা তারাভরা আকাশের তলে আর চারদিক ঘেরা সীমাহীন জলরাশির মাঝখানে কৃত্রিমতাবর্জিত একটি রাত্রিযাপন আপনার জীবনের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে।
হোটেলে রুম নিয়ে থাকতে চাইলে শহরের এনাম নাহার এলাকায় মাঝারি মানের দু-একটি হোটেল পাবেন। এ ছাড়া পূর্বানুমতি নিয়ে গেলে উঠতে পারেন সন্দ্বীপ উপজেলা ডাকবাংলোয়। ডাকবাংলোর ফোন: ০১৮১১-৩৪১৭২২।
